সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
বাঙালির স্বাধীনতা-সংগ্রামের স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। সেই স্লোগান বুকে নিয়েই মহাকাশের পথে উড়ল দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ১৪ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিট) স্পেসএক্সের লঞ্চিং স্টেশন থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-কে নিয়ে উৎক্ষেপণ যান ফ্যালকন-৯ মহাকাশের পথে উড়ে যায়।
পুরো উৎক্ষেপণ পর্বটি সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও উৎক্ষেপণ পর্বটি সরাসরি সম্প্রচার করে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণকারী প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের ইউটিউব চ্যানেলেও উৎক্ষেপণ পর্ব সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। । বিভিন্ন জেলা শহরে বড় পর্দায় সেটা প্রদর্শনেরও ব্যবস্থা করা হয়। শুধু শহর নয়, উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে।
উৎক্ষেপণের প্রথম ১০ ঘণ্টার মধ্যেই এ মহাকাশ যানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে গাজীপুরের ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের। এ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকেই সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ শুরু হবে তখন থেকেই।
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রত্যক্ষ করতে ফ্লোরিডায় স্পেসএপের লঞ্চিং স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, ডাক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারসহ বাংলাদেশ থেকে যাওয়া একটি প্রতিনিধি দল।
এর আগে ফ্লোরিডায় উপস্থিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সেখানে সাংবাদিকদের জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গায়ে লেখা থাকছে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। এর আগে যখন তিনি ফ্রান্সে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের কারখানা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তখনই স্যাটেলাইটের গায়ে এ স্লোগানটি লিখে এসেছিলেন। সেই স্লোগান বুকে নিয়েই মহাকাশে ঠাঁই করে নিচ্ছে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিচালনায় নবগঠিত কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম শুক্রবার রাতে জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ে রওনা হওয়ার প্রথম দুই ঘণ্টার মধ্যে ফ্যালকন-৯ তিনশ’ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করবে। প্রথম ১০ থেকে ১২ ঘণ্টায় অতিক্রম করবে ৩৫ হাজার কিলোমিটার পথ। উৎক্ষেপণ যানটি তিন হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করার পর থেকেই গাজীপুরে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে সেটির অবস্থান দেখা যাবে। এ সময় থেকে এই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ কাজ শুরু হবে। পরবর্তী সময়ে এটি পরিচালনাও করবে এই ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটটি কক্ষপথে পৌঁছতে সময় লাগবে আট থেকে দশ দিন। তবে এটি পুরোপুরি কক্ষপথে স্থাপিত হয়ে কার্যকরভাবে ব্যবহার উপযোগী হতে সময় লাগবে অন্তত দু’মাস।
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ ‘কমিউনিকেশন এবং ব্রডকাস্টিং’ ক্যাটাগরির এ স্যাটেলাইট। অর্থাৎ, এটি যোগাযোগ এবং সম্প্রচার কাজেই মূলত ব্যবহার করা হবে। এ স্যাটেলাইটে থাকছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার সক্ষমতা। এর মধ্যে ২০টি ট্রান্সপন্ডার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে ব্যবহার করবে। আর ২০টি ট্রান্সপন্ডার বিদেশি রাষ্ট্রের কাছে ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বছরে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আয় করতে সক্ষম হবে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিবছর অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ অর্থ ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করে। বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালিত হলে এ অর্থ বাংলাদেশেই থেকে যাবে। ফলে বড় অঙ্কের টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। দেশের বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ ব্যয়ও কমে আসবে।
এ ছাড়া স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া যাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ। ফলে ব্যান্ডউইথের বিকল্প উৎসও পাওয়া যাবে। এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করে দেশের দুর্গম দ্বীপ, নদী ও হাওর এবং পাহাড়ি অঞ্চলে স্যাটেলাইট প্রযুক্তিতে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা চালুও সম্ভব হবে। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে স্বাভাবিক টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও উদ্ধারকর্মীরা স্যাটেলাইট ফোনে যোগাযোগ রেখে দুর্গত এলাকায় কাজ করতে সক্ষম হবেন। মহাকাশ গবেষণার প্রয়োজনে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের জন্য রাশিয়ার ইন্টার স্পুটনিক থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে বরাদ্দ পাওয়া কক্ষপথের ভাড়ার মেয়াদ ১৫ বছর।